আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদীর ৫টি আসনেই নৌকা-স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর দল থেকে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করলে দলীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না থাকায় আ.লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদীতে মোট বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ৩৭ জন। এর মধ্যে নরসিংদী-১ আসনে ৯ জন, নরসিংদী-২ আসনে ৭ জন, নরসিংদী-৩ আসনে ৮ জন, নরসিংদী-৪ আসনে ৫ জন ও নরসিংদী-৫ আসনে ৮ জন নির্বাচনে অংশ নেবে। সবগুলো আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য বেশি।
আ.লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংদী জেলার ৫টি আসনে দলীয় একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। এসব প্রার্থীরা নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আ.লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন।
অতীতে দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন, এলাকার সার্বিক উন্নয়ন কাজ, করোনাকালে মাঠে থাকা না থাকা, নিজস্ব ভোট ব্যাংকসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিতে হচ্ছে প্রার্থীদের। এদিকে বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ না করলেও স্বতন্ত্রসহ অন্য দলের প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করার কারণে সবকটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ভোট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নরসিংদী-১ (সদর) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (হিরু)। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন জেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌরমেয়র কামরুজ্জামান। দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন আলতামাশ কবির। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বৈধ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আ.লীগের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য।
নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে এবার নৌকার মনোনয়ন পাননি বর্তমান এমপি জহিরুল হক ভূইয়া মোহন ও সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। মনোনয়ন পেয়েছেন সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাবেক এমপি রবিউল আউয়াল খান কিরণের ছেলে ফজলে রাব্বি খান। রাজনৈতিক পরিবারে এবার নৌকার মনোনয়ন গেলেও সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্বতন্ত্র ভোটে অংশ নেবেন। এতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন বয়সে তরুণ প্রার্থী ফজলে রাব্বি খান। এমন হিসেব নিকেশ করছেন স্থানীয়রা।
নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনে এবারও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি শিল্পমন্ত্রী অ্যাড. নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে মন্ত্রীর সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, পাশাপাশি রয়েছে দলীয় কোন্দল।
এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন মনোনয়নবঞ্চিত মনোহরদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু। উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বতন্ত্র প্রার্থীতা ঘোষণায় অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন ৫ বারের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। রায়পুরার উন্নয়নে রাজুর অবদান অনস্বীকার্য হলেও দলীয় কোন্দল, চরাঞ্চলের সংঘাতসহ নানা কারণে কিছুটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারেন তিনি।
এখানে উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধূরী। চরাঞ্চলে মিজানুরের কিছুটা নিজস্ব ভোট ব্যাংকসহ কোন্দলের জেরে রাজুবিরোধী দলটির একটি অংশ ও মনোনয়ন বঞ্চিত অন্যরা একজোট হলে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে পারেন নৌকার প্রার্থী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু।
জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, সুষ্ঠুভাবে ভোট যাতে নরসিংদী জেলায় হয় সেটা আমরা নিশ্চিত করবো। নির্বাচনীয় সব বিধি-বিধান প্রার্থীদের মানতে হবে। আইনের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করা যাবে না।
টিএইচ